ডাকটা শুনে প্রায় চমকে উঠলেন সুচেতা। আজকাল অন্যমনস্কতায় প্রায়শই শুনছেন এই ডাক। সদ্য স্নান সেরে অভ্যাস মত বারান্দায় ভিজে কাপড়গুলো তারে মেলে দিচ্ছিলেন তিনি। এমন সময় তন্ময়তা ভাঙা ‘মা’ ডাকটা কানে এল তাঁর। সাড়া দেবার আগে পেছন ফিরে তাকালেন। তখনি সব কথা আবার মনে পড়ল।সাড়া আর দেওয়া হল না। কদিন আগে হলেও স্নান সেরে পুজোয় বসতেন তিনি। এই কদিন আর বসেন না। বারান্দা থেকে ফিরে ডাইনীং রুমের দিকে এলেন সুচেতা। কাজের লোক সরমা চা করছে বেশ মন দিয়ে। ওর বকবকানি কদিন অনেক কম। কেমন চুপচাপ সবকিছু। সব যেন শান্তি কল্যান। ডাইনীং রুম থেকেই চোখ গেল তাঁদের শোবার ঘরের দিকে। আরাম কেদারায় গা এলিয়ে প্রায় আধশোয়া হয়ে আছেন বিশ্বনাথ। চোখ নীমিলিত। হাতের চুরুটের ধোঁয়া দেখে বোঝা যাচ্ছে তিনি জেগে আছেন। প্রায় চার বছর হল ব্যাঙ্কের চাকরী থেকে অবসর নিয়েছেন বিশ্বনাথ। সুগার, প্রেশার দুটোই নিত্য সঙ্গী। ডাক্তারের হুকুম সকালে অন্তত চল্লিশ মিনিট দ্রুত হাঁটা। আজকাল আর যান না তিনি। আগে হলে সুচেতা বকাবকি করতেন। কদিন আর করেন না।কী হবে এই সর্বহারা মানুষটাকে আরও কদিন বাঁচিয়ে রেখে। ভাবতে ভাবতে শোবার ঘরে ঢুকলেন সুচেতা। সকালে উঠেই চা খাবার অভ্যেস বিশ্বনাথের। সরমা পাশের টি টেবলে চা দিয়ে গিয়েছিল। খাননি বিশ্বানাথ।ভুলে গেছেন হয়ত। এখন তা জুড়িয়ে জল হয়ে গেছে। আগে হলে চেঁচামেচি শুরু করতেন সরমা। কদিন আর করেন না। কী হবে চেঁচিয়ে, এই মৃতপ্রায় মানুষটাকে জাগিয়ে দিয়ে। ‘জলখাবার কী করব বৌদি’ – সরমার কথায় যেন বর্তমানে ফেরেন সুচেতা। কিন্তু উত্তর দিতে ইচ্ছে করে না তাঁর। ‘যা খুশি করো সরমা। বাজার যেতে হলে টাকা আমার হাতব্যাগ থেকে বার করে নিও’। সরমা মুখ ঘুরিয়ে নিল। সুচেতাকে সে জানতে দিতে চায় না তার কান্না। তার মন খারাপের কথা। এ শহরে শরৎকাল খুবই ক্ষণস্থায়ী। হেমন্ত তো আরোই ক্ষণিকের। জানলা দিয়ে দেখলে দেখা যায় নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা। এ সময় লোকে বাড়ির ছাদে আকাশ প্রদীপ জ্বালিয়ে পূর্বপুরুষদের স্মরণ করে। সন্ধ্যে বেলা বেশ কয়েকটা বাড়িতে দেখা যায় আকাশ প্রদীপের রেওয়াজ। আচম্বিতেই দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে সুচেতার বুক থেকে। ‘টিংটং’। কলিং বেলের আওয়াজ মগ্নতা ভগ্ন করে তাঁর। সরমা দরজা খোলে। তারপর ডাকে ‘বৌদি’। ধীরে পায়ে দরজার কাছে দাঁড়ান সুচেতা। ডেলিভারী বয়। ‘শুভঙ্কর মল্লিক?’ সুচেতা যন্ত্রের মত ঘাড় নাড়েন। ‘হ্যাঁ। বাড়ি আছেন?’ ছেলেটি জিজ্ঞাষা করে। ‘না’। সুচেতার ঠোঁট থেকে অসাড় শব্দগুলো বেরিয়ে আসে। ‘আপনি?’ – ছেলেটির পরবর্তী প্রশ্ন। ‘মা’। সুচেতার সংক্ষিপ্ত উত্তর। ‘নিন’। প্যাকেটটা তাঁর হাতে দিতে দিতে বলে ছেলেটি। ‘এখানটায় সই করুন’। সুচেতা প্যাকেটটা নেন। সই করেন। ‘ ‘দাম’? প্রশ্ন করেন তিনি। ‘দেওয়া আছে আগেই’। সব মূল্য চোকানোই আছে। ভাবতে থাকেন সুচেতা। ‘মাসিমা আসি তাহলে। আমাদের সাইটে একটু ফিডব্যাকটা দিতে বলবেন স্যরকে। ‘সে তো আর হবার উপায় নেই বাবা’। সুচেতা বলে ওঠেন অস্ফুটে। ‘আজ আটদিন হল সে চলে গেছে আমাদের ছেড়ে। হাইরোডে দুর্ঘটনা। দেহটা কাটাছেঁড়া হয়েছিল খুব। আমিই চিনতে পারিনি বাবা। নমাস পেটে ধরেও’। সুচেতা থামেন। ছেলেটি ধীরপায়ে চলে যায়। তাঁর অপসৃয়মান চেহারার দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে সরমার ডুকরে ওঠা কান্নার আওয়াজটা কানে আসে সুচেতার। একসাথে এত বছর কাটিয়ে সরমাও এ বাড়িরই অংশ হয়ে গেছে কবেই।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Hasan ibn Nazrul
মায়ের বেদনা চিরকালের। তারপরও এতবড় বেদনা নিষ্ঠুরতম বেদনা বৈকি! ভোটসহ শুভ কামনা।
সেলিনা ইসলাম
চিরতরে সন্তান হারানো মায়ের মন ভাঙ্গার শব্দ কেবল যেন ভুক্তভোগীরাই শুনতে পারেন! অল্প পরিসরে হলে গল্পে দুর্ঘটনার ভয়াবহতায় বেঁচে থেকেও মৃত প্রায় একটা পরিবারের কষ্টের দৃশ্য ফুটে উঠেছে! গল্পের কথোপকথনগুলো এক লাইন বাই লাইন লিখে দিলে মনে হয় আরও বেশি পড়তে ভালো লাগত। শুভকামনা রইল।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
ঘটনার আকস্মিকতায় অভিভূত মনের ভাঙ্গন।
১৭ এপ্রিল - ২০১৯
গল্প/কবিতা:
১৬ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।